পুজোর উপহার

প্রিয় কানাইদা,

“-তোমাদের সবার কি পুজোর জামাকাপড় কেনা হয়ে গেছে?”

প্রশ্নটা করেছিলাম ক্লাস থ্রির বাচ্চাদেরকে।

কেউ কেউ বলল, ‘হয়ে গেছে,’ কেউ বলল, ‘কিনব,’ কিন্তু কয়েকজন কোনও উত্তর দিল না। বার বার জিজ্ঞেস করাতে বলল, ‘কিনব না।’

‘কেন কিনবে না?’- কোন উত্তর নেই। আমিও নাছোড় বান্দা। অবশেষে পাশের বেঞ্চ থেকে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী আমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিল, ‘ওদের টাকা নেই।’

উত্তরটা খুবই সোজা। কিন্তু এই সোজা উত্তরটাই কেন জানি মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।

ওদের বন্ধুরা সবাই নতুন জামা পরে ঘুরবে আর ওরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে, বিষয়টা কল্পনায় ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। যদিও এ বিষয়ে ওই শিশুদের হয়তো কোনও আভিযোগ নেই ওদের বাবা-মায়ের কাছে। কারণ ওরা হয়তো বুঝে গেছে, এটাই বাস্তব, এটাই নিয়ম।

মায়া ম্যাডামের সহযোগিতায় একটা লিস্ট করা গেল। সেই লিস্টে আমাদের স্কুলের এইসব ছাত্র-ছাত্রীতো থাকলই, এর পাশাপাশি এলাকার আরো কিছু ছেলে-মেয়ের নাম যোগ করলাম যাদের বাবা-মা নেই। কিছু অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার নামও লিখতে হল। সব মিলিয়ে জনা কুড়ি হবে। কয়েকজন বন্ধুকে বললাম পরিকল্পনাটা। তারা এক কথায় সাহায্য করতে রাজি। শিলিগুড়িতে ডাক্টার দেখাতে গিয়ে পোশাকগুলো কেনা হল। সব মিলিয়ে খরচটা আমার সাধ্যের মধ্যেই ছিল বলে শেষপর্যন্ত বন্ধুদের সাহায্য আর নিতে হল না। এই ছিল গত বছরের কাহিনী।

এবারও উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে, একটু বড় আকারে। আমরা যদি নতুন পোশাক না দেই তাহলে পুরাতন পোশাকেই তাদের পুজো পার হবে, বেছে বেছে এমন শিশু-বয়স্কদের নামই শুধু লিস্ট করেছি। শুধু আমবাড়িতেই এমন সংখ্যা ৩২ জন। খেরবাড়ি সহ শ্রীপুর-ডাঙ্গীপাড়া এলাকার তালিকা এখনো করা হয়নি। বুঝতেই পারছ, শুধু তালিকা করলেই তো আর হবে না, আর্থিক ব্যাপারটাও রয়েছে। তোমার কাছে আবেদন, যদি সম্ভব হয় কিছু আর্থিক সাহায্য পাঠাও আর বন্ধুদেরকেও বলো। আমাদের দেওয়া এই একসেট পোশাকে তাদের জীবনযাত্রার মান হয়তো পরিবর্তন হবে না কিন্তু তারা যে মন থেকে খুশি হবে এটা নিশ্চিত।

-তোমার নির্মল

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *